গো-ও-ও-ল

মধুরেণ সমাপয়েত। না, সমাপ্তির এখনো বেশ খানিকটা বাকি  Euro2020'র। তবে গতকাল বেলজিয়াম এর সমাপ্তি ঘটল এবং যা একেবারেই মধুর হলো না। যাকগে কি আর করা যাবে  after all its a sport. তাই  সবকিছু sportingly গ্রহণ করাটাই শ্রেয়।

Euro 2020


হ‍্যাঁ, এবারের Euro তে আমরা মানে আমার পরিবার সর্বার্থে বেলজিয়াম সাপোর্টার। তার কারণটা অন‍্য কিছু না, কারণ আমরা বিগত কয়েকবছর ধরে টিনটিনের দেশের বাসিন্দা। আর বিশ্বের এক নম্বর ফুটবল দলের সমর্থক না হয়ে পারা যায়। সত‍্যিই ভাবতে ভালো লাগে আমি এমন একটি ছোট্ট দেশে থাকি যে তার ক্ষুদ্রতা সত্ত্বেও বিশ্ব ফুটবলে শ্রেষ্ঠ আসন দখল করেছে।


রেড ডেভিল্স এ সজ্জিত বিখ‍্যাত ম‍্যানিকিন পিস

ইউরোপে গত কয়েক বছর থাকার সুবাদে ফুটবল উন্মাদনা নিয়ে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হল। তায় আবার একটি বিশ্বকাপ ও একটি ইউরোকাপের অভিজ্ঞতা। মনে হলো ইউরো কাপ যেন অনেক বেশি এদের নিজেদের  খেলা এবং সেটাই স্বাভাবিক। আর আমাকেও সমস‍্যায় পড়তে হয়নি কোন্ দলকে সমর্থন করবো তা নিয়ে। যা ২০১৮ তে অভিজ্ঞতা হয়েছে। সে এক 'শাঁখের করাত' অবস্থা আমার। আজন্ম ব্রাজিল সমর্থক হয়ে যে কাকে সমর্থন করবো বুঝতে পারিনি। কিন্তু ঐ যে জন্মে থেকে যে দলটাকে সমর্থন করেছি সে যখন বেলজিয়াম এর কাছে হেরে গেছিল তখন যে কি দুঃখ হয়েছিল তা আর কহতব‍্য নয়। শুধু এই বলে মনকে বুঝিয়েছি 'বড়ো বড়ো টুর্ণামেন্টে এইরকম ছোট ছোট অঘটন ঘটতেই থাকে।' কিন্তু সেদিন কি শুধুই আমার দুঃখ হয়েছিল; না, আমার সেদিনের সেই ৬ বছরের মেয়েটাও যে তার পাপার মতো আর্জেন্টিনার সমর্থক না হয়ে মায়ের মতো ব্রাজিলের সমর্থক ছিল। যদিও সে বুঝতে পারেনা যে কাকে সমর্থন করবে।
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। এ দৃশ‍্য ২০১৮র বিশ্বকাপের যা, এ বছর আর দেখা যায়নি।

এবার  আসি Euro 2020'র কথায়। করোনার অপার দয়ায় যা একবছর দেরিতে হচ্ছে। এবার  কিন্তু আমি সাচ্চা বেলজিয়াম সাপোর্টার। প্রথম যেদিন টুর্ণামেন্টের সূচী পেলাম সেদিনই একেবারে বেলজিয়ামের খেলার দিন ও প্রতিপক্ষ মাথায় গেঁথে নিয়েছিলাম। তার পরে অবশ‍্য দেখলাম আমাদের পরিবারের  কোভিড ভ‍্যাকসিন নেওয়ার দিনগুলোতেই কিনা বেলজিয়ামের ম‍্যাচ। ব‍্যস, সোনায় সোহাগা, আর কি ভুল হয়। মনে মনে ঠিক করে  নিলাম যাই হোক, ভ‍্যাকসিন নিয়ে যদি কাতরাই; তবে অন্তত সঙ্গে থাকবে রেড ডেভিলসরা। যাই হোক ভ‍্যাকসিন নিয়ে কোনো সমস‍্যা না হওয়ায় মনের আনন্দে ম‍্যাচ উপভোগ করেছি।

বেলজিয়াম যেহেতু এই মুহুর্তে  বিশ্বের এক নম্বর দল, তাই দেশ থেকে আত্মীয় পরিজন বা বন্ধুরা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করছে এখানে ইউরোর আঁচ কেমন। কেমন আর হবে এই 'নিউ নর্ম‍্যাল' পরিস্থিতিতে।২০১৮ র বিশ্বকাপের সময় যেমন রাস্তার অনেক জায়গায় বড় স্ক্রিন লাগানো হয়েছিল এবার আর তা নেই। ঐ পাব রেষ্টুরেন্টগুলোই যা একটু বড় স্ক্রিন লাগিয়েছে। আর তা না হলে ঘরে বসেই খেলা দেখা। আমাদের  দ্বিতীয় পন্থাটাই শ্রেয় মনে হয়েছে।

এবার আসি কি পেলাম এই ইউরো 2020 থেকে। পেলাম তো অনেক কিছুই। দেখলাম  পাশাপাশি শক্তিশালী দেশগুলি টুর্ণামেন্ট থেকে একে একে ছিটকে যাওয়ার পর বেলজিয়াম যেন কেমন একটা দ্বীপের মতো ভাসছিল। গতকাল ইতালির কাছে হেরে গিয়ে সেই দ্বীপও অবশ‍্য ডুবে গেল। কিন্তু তাতে কি, কোয়ার্টার ফাইনাল তো খেলেছে আমার দল। প্রতিবারের মতো এবারও অনেকগুলো অঘটন ঘটেছে টুর্ণামেন্টে। না তার খতিয়ান দেওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই; তা প্রায় সবাই জানেন। আমি শুধু বলবো আমার ঘরের কথা। আমি কিন্তু এবার আর শাঁখের করাত পরিস্থিতিতে পড়িনি। পড়েছে আমার বাড়ির অন‍্য আরেকজন, আমার ৯ বছরের কন‍্যাটি। গ্রুপ F যে 'group of death' ছিল এটা তো সকলেরই জানা। কিন্তু সেখানে দুটি এমন দল ছিল যাদের ম‍্যাচ নিয়ে বেচারী খুব সমস‍্যায় পড়েছিল। ফ্রান্স আর জার্মানির ম‍্যাচের কথা বলছি। সে বেচারী ফ্রেঞ্চ স্কুলে পড়ে তাই ফ্রেঞ্চপ্রীতি তো একটু থাকবেই। আবার তার ক্লাস টিচার জার্মান। ব‍্যস হয়ে গেল। ম‍্যাচ চলাকালীন তার পাপা তাকে বলেছে জার্মানি হেরে গেলে তার টিচার'এর মন খারাপ হয়ে যাবে আর স্টুডেন্টদের বেশি করে হোম ওয়ার্ক দেবেন। নাও ঠ‍্যালা, বেচারী পড়ল মহা চিন্তায়; কারণ জার্মানি তো গেছে হেরে। কিন্তু সেও ছাড়বার পাত্রী নয়; পরেরদিন স্কুলে গিয়ে সে নিজেই টিচারকে বলেছে 'কি কাল জার্মানি হেরে গেলো তো?' এবং তখন নাকি সেও জার্মানির সাপোর্টার। তাই সে টিচারকে আশ্বাস দিয়েছে,  চিন্তার কিছু নেই ; পরেরটায় নিশ্চয়ই জিতবে জার্মানি। বুঝলাম মেয়ে আমার বড়ো হচ্ছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিখছে।

এই হলো ইউরো কাপ নিয়ে আমার ঘরের কাহানী। জানিনা কে এবার সেরার মুকুট জিতবে। তবে মনে প্রাণে চাই ইতালি যেন পায়, তারা এবার যেন অপ্রতিরোধ‍্য। হ‍্যাঁ, কাল রেড ডেভিলসরা ইতালির কাছে হেরে গেছে, আর তার জন‍্য আমাদের মন খারাপও হয়েছে। কিন্তু স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই যে ভালো খেলেছে সেই জিতেছে। তাই আরেকটা কথাও বলি, নিশ্চয়ই কারো না কারো পছন্দের দল হয়তো জিতবে, কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ জিতবে আসলে ফুটবল।

সুমনা
৩রা জুলাই,২০২১


Comments

Popular posts from this blog

মোহময়ী গিথোর্ণ ( Charming Giethoorn)

ফ্লোরেন্টাইন ক্রিস্টমাস